You are currently offline. Some features may be limited.
Install বং Toozs: বাংলার মুখ, নতুন ধারা।
Get quick access and enhanced performance
T20 বিশ্বকাপে এশিয়া কাপের হেরিটেজ ও ঐতিহ্য দার্জিলিং - পাহাড়ের রানীর অ্যাডভেঞ্চার সিকিম - কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে মানালি - হিমাচলের অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋষিকেশ - যোগ ও অ্যাডভেঞ্চারের পবিত্র সংমিশ্রণ লাদাখ - হিমালয়ের রাজ্যে রোমাঞ্চকর অভিযান ভ্রমণ ফ্যান্টাসি গেম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের জীবনী ও অবদান বাংলাদেশ বিনিয়োগ ক্রিকেট বিশ্বকাপ কপা আমেরিকা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফিফা বিশ্বকাপ টেনিস ক্রিকেট ফুটবল মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ শিশুদের স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা স্বাস্থ্য প্রযুক্তি অন্যান্য আবহাওয়া গ্যালারি জীবনরেখা উৎসব জীবন ধারা রাজনীতি খেলাধুলা ব্যবসা বিনোধন বিজ্ঞান শিক্ষা হুগলি মুর্শিদাবাদ বাঁকুড়া বীরভূম পুরুলিয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা উত্তর ২৪ পরগনা পশ্চিম মেদিনীপুর পূর্ব মেদিনীপুর বর্ধমান উত্তরবঙ্গ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ দেশ খবর

পুরী স্বর্গদ্বার ইতিহাস ও ধর্মীয় তাৎপর্য – মৃত্যুর পর মুক্তির তীর্থস্থান । Puri Swargadwar History in Bengali |

পুরী স্বর্গদ্বার ইতিহাস ও ধর্মীয় তাৎপর্য – মৃত্যুর পর মুক্তির তীর্থস্থান । Puri Swargadwar History in Bengali |

পুরী স্বর্গদ্বার ইতিহাস – মৃত্যুর পর মুক্তির পথে এক চিরন্তন তীর্থভূমি

🌊 ভূমিকা: পুরীর আধ্যাত্মিক রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু

ভারতের আধ্যাত্মিক মানচিত্রে যদি এমন কোনও স্থান থাকে যেখানে ধর্ম, ইতিহাস, সমুদ্র ও মুক্তির ধারণা একসঙ্গে মিলিত হয়েছে, তবে তা হলো ওড়িশার পুরী শহর। এখানে অবস্থিত ভগবান শ্রীজগন্নাথদেবের বিখ্যাত মন্দির এবং তার অদূরে রয়েছে সমুদ্রতীরবর্তী এক পবিত্র স্থান – স্বর্গদ্বার

“স্বর্গদ্বার” শব্দটির আক্ষরিক অর্থই হলো “স্বর্গে প্রবেশের দ্বার”। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, এই স্থানে দেহত্যাগ করলে আত্মা পুনর্জন্মের বন্ধন ছিন্ন করে মুক্তি লাভ করে। তাই হাজার বছর ধরে অসংখ্য ভক্ত, সাধু ও সন্ন্যাসী এখানে এসে শেষ যাত্রার পথ বেছে নিয়েছেন।

কিন্তু কেন এই স্থান এত পবিত্র? কবে থেকে এর ইতিহাস শুরু? আর আজকের দিনে এর গুরুত্ব কীভাবে টিকে আছে? এই প্রশ্নগুলির উত্তরই আমরা জানব এই লেখায়।


📜 স্বর্গদ্বারের উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

পুরীর ইতিহাস মূলত জগন্নাথ মন্দিরকেন্দ্রিক। ১২শ শতকে গঙ্গ রাজবংশের রাজা অনন্তবর্মা চোডগঙ্গ দেব শ্রীজগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন। সেই সময় থেকেই পুরীকে বলা হত “শ্রীক্ষেত্র” এবং “মোক্ষক্ষেত্র” — অর্থাৎ মুক্তির স্থান।

পুরাণ মতে, ভগবান বিষ্ণুর এক অবতার জগন্নাথ নিজে পুরীতে অবস্থান করেন। তার সান্নিধ্যেই আত্মা মুক্তিলাভ করে বলে বিশ্বাস করা হয়। ‘স্কন্দ পুরাণ’, ‘ব্রহ্ম পুরাণ’, এবং ‘কপিল সংহিতা’-তে উল্লেখ আছে যে, পুরীর দক্ষিণ প্রান্তে সমুদ্রের ধারে এমন এক তীর্থ আছে যেখানে মৃত্যুই মুক্তির সূচনা।

এই স্থানকেই পরবর্তীতে বলা হয় “স্বর্গদ্বার তীর্থ”। ধারণা করা হয়, প্রায় ৮০০ বছর আগে থেকেই এখানে মৃতদেহ দাহ করার প্রথা চলে আসছে। স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন রাজপরিবারের সদস্য, পুরোহিত, এমনকি বহু সাধু-সন্ন্যাসী তাঁদের জীবনের শেষ সময় এখানে কাটাতেন।


🔱 পুরাণ ও ধর্মীয় বিশ্বাসে স্বর্গদ্বারের গুরুত্ব

স্বর্গদ্বার শুধুমাত্র একটি দাহস্থল নয়, এটি হিন্দু ধর্মে মোক্ষের দ্বার হিসেবে স্বীকৃত।
‘স্কন্দ পুরাণে’ বলা হয়েছে—

“যত্র গঙ্গা সমুদ্রং প্রাপ্যতু পুণ্যতমং তীর্থং, তত্র মরণমুক্তির দ্বারং।”

অর্থাৎ, যে স্থানে গঙ্গা (পবিত্র জল) ও সমুদ্রের মিলন ঘটে, সেখানে মৃত্যুই মুক্তির দ্বার।

পুরীতে, সমুদ্রকে বলা হয় “মহোদধি” — অর্থাৎ মহান সমুদ্র, যা ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক। স্বর্গদ্বার ঘাটে এই সমুদ্রের জলে স্নান করার পর মৃত্যুবরণ করলে আত্মা সরাসরি বৈকুণ্ঠে গমন করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

এই বিশ্বাসের কারণে আজও বহু হিন্দু পরিবার শেষকৃত্যের জন্য মৃতদেহ পুরী নিয়ে আসে। বলা হয়, জগন্নাথদেবের দর্শন ও স্বর্গদ্বারে দাহ — এই দুই মিলে আত্মা মুক্তিলাভ করে।


🔥 স্বর্গদ্বার: দাহস্থল ও মুক্তির প্রক্রিয়া

স্বর্গদ্বার ঘাটকে পুরীর সবচেয়ে পবিত্র দাহস্থল হিসেবে ধরা হয়। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য চিতা জ্বলে। স্থানীয় পুরোহিতরা বিশ্বাস করেন, এই চিতার ধোঁয়া ও সমুদ্রের বায়ু একসঙ্গে মিলিত হয়ে আশেপাশের পরিবেশকেও পবিত্র করে তোলে।

প্রথানুযায়ী, মৃতদেহকে প্রথমে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে মাথা করে শুইয়ে রাখা হয়। তারপর পরিবারের সদস্যরা “রাম নাম সত্য হে” উচ্চারণ করে চিতা প্রজ্জ্বলন করেন। সমুদ্রের ঢেউ যেন সেই আগুনকে স্পর্শ করে আশীর্বাদ দেয়।

পুরাণ অনুযায়ী, এই স্থানে ভগবান শিব নিজে মৃত্যুরক্ষক রূপে অবস্থান করেন, এবং মৃত্যুর পর আত্মাকে নিরাপদে বৈকুণ্ঠে পাঠান। তাই অনেক সাধু ও সন্ন্যাসী জীবনের শেষ প্রান্তে পুরী এসে বসবাস শুরু করেন, যাতে মৃত্যুর পর তাঁদের দেহ স্বর্গদ্বারে দাহ করা যায়।


🌅 প্রভাতের সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি

যে কেউ ভোরবেলা স্বর্গদ্বারে গেলে এক অনন্য অনুভূতি লাভ করেন। একদিকে উদীয়মান সূর্য, অন্যদিকে সমুদ্রের গর্জন, আর মাঝখানে চিতা থেকে উঠা ধোঁয়া — এক অদ্ভুত শান্তি ও অনিত্যতার বার্তা দেয়।

স্থানীয়রা বলেন, “স্বর্গদ্বারে সূর্যোদয় দেখা মানে জীবনের সত্য উপলব্ধি করা।” তাই বহু পর্যটকও এখানে সকালে প্রার্থনা করতে আসেন।


🕯️ সাধু ও মহাপুরুষদের স্বর্গদ্বারে দেহত্যাগ

ইতিহাসে দেখা যায়, বহু খ্যাতনামা সাধু ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব তাঁদের জীবনের শেষ মুহূর্তে পুরীতে এসে বসবাস করেছেন। যেমন —

  • ভক্ত সালবেগ, যিনি মুসলিম পিতা ও হিন্দু মাতার সন্তান, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জগন্নাথের ভক্তি করেছিলেন।

  • তোটারাম দাস বাবাজি, যিনি গঙ্গাসাগর থেকে পুরী পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন এবং শেষে স্বর্গদ্বারে দেহত্যাগ করেন।

এই উদাহরণগুলোই প্রমাণ করে যে, স্বর্গদ্বার শুধু হিন্দু নয়, বরং সর্বধর্মের মানবতার এক প্রতীক।


🏖️ স্বর্গদ্বার সৈকত: পর্যটন ও সাংস্কৃতিক দিক

আজকের দিনে স্বর্গদ্বার কেবল একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি পুরীর অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতি বছর লাখ লাখ ভক্ত ও পর্যটক আসেন।

স্বর্গদ্বার সৈকত হলো পুরীর সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনপ্রিয় সমুদ্রতীর। এখানে রয়েছে—

  • পবিত্র ঘাট ও দাহস্থল এলাকা

  • শ্মশান সংলগ্ন শিবমন্দির

  • স্থানীয় হস্তশিল্প ও প্রসাদ দোকান

  • পর্যটকদের জন্য হোটেল ও বিশ্রামাগার

  • সরকার কর্তৃক স্থাপিত নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা

রাতে এই ঘাটে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়, যা যেন জীবনের ক্ষণস্থায়ীতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।


🏛️ প্রশাসনিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা

ওড়িশা সরকার ও পুরী মিউনিসিপ্যালিটি মিলে এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। দাহকার্যের জন্য নির্দিষ্ট স্থান, কাঠ ও বিদ্যুৎচালিত চুল্লি — উভয় ব্যবস্থাই এখানে আছে।

স্বর্গদ্বার ঘাটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া এখানে আগত পরিবারের জন্য সরকারি সহায়তাও পাওয়া যায়।


🪔 আধ্যাত্মিক দর্শন ও দার্শনিক ব্যাখ্যা

স্বর্গদ্বারের মূল দর্শন হলো “জীবন থেকে মুক্তি” — অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে আত্মার মুক্তি। এখানে এসে মানুষ বুঝতে শেখে যে মৃত্যু শেষ নয়, বরং এক নতুন যাত্রার সূচনা।

এই ধারণাটি অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের সঙ্গেও মিল রাখে। শঙ্করাচার্য বলেছেন —

“ব্রহ্ম সত্যম্ জগৎ মিথ্যা, জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ।”

অর্থাৎ, আত্মা কখনও নাশ হয় না; সে চিরন্তন। স্বর্গদ্বারে এই দর্শনের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়।


📖 সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্বর্গদ্বারের উল্লেখ

বহু কবি ও সাহিত্যিক তাঁদের রচনায় স্বর্গদ্বারের কথা উল্লেখ করেছেন। ওড়িয়া সাহিত্যিক রাধানাথ রায় লিখেছিলেন:

“মহোদধি তীরে জগন্নাথ ধাম, স্বর্গদ্বারে মেলে চির শান্তির নাম।”

এছাড়াও বহু ভক্তিগীত, লোককাহিনি ও আঞ্চলিক গানে স্বর্গদ্বারকে “মুক্তির তীর্থ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।


💫 বর্তমান সময়ে স্বর্গদ্বারের মানসিক প্রভাব

আজকের দ্রুতগতির জীবনে, যেখানে মৃত্যু নিয়ে কথা বলতেও অনেকে ভয় পায়, সেখানে স্বর্গদ্বার মানুষকে শেখায় জীবনকে উপলব্ধি করতে।

এখানে এসে বোঝা যায় — জীবনের শেষে দেহ মাটিতে মিশে যায়, কিন্তু আত্মা অনন্তের পথে যাত্রা শুরু করে। এই ভাবনাই মানুষকে করে তোলে বিনম্র ও শান্ত।


🌺 উপসংহার: চিরশান্তির প্রতীক পুরী স্বর্গদ্বার

পুরী স্বর্গদ্বার শুধু একটি স্থান নয়, এটি জীবন ও মৃত্যুর মাঝের এক অদ্ভুত সেতু। এখানে এসে বোঝা যায়, মৃত্যুই শেষ নয় — এটি মুক্তির দরজা।

ভগবান জগন্নাথের আশীর্বাদ, সমুদ্রের গর্জন, সূর্যের আলো আর ভক্তির স্পর্শ — এই সব মিলিয়ে পুরীর স্বর্গদ্বার হয়ে উঠেছে “চিরশান্তির প্রতীক”

যে কেউ একবার এখানে এসে দাঁড়ালে বুঝতে পারেন, কেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই স্থানটিকে বলা হয় —
👉 “মোক্ষক্ষেত্র পুরী স্বর্গদ্বার” — স্বর্গে যাওয়ার পবিত্র পথ।

 

Post Code : Njct4KaF4KaV4KeN4Kaf4KeLIDI3LCAyMDI1

Stay Updated with Tech News

Get the latest technology updates, tutorials, and reviews delivered to your inbox.

Popular Tags